করেছেন ৩০ হাজার কোটির স্ক্যাম, হয়েছে ওয়েব সিরিজও, এই ব্যক্তির কীর্তি জানলে হয়ে যাবেন “থ”

নেশন হান্ট ডেস্ক: ২০২০ সালে OTT প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পায় জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ (Web Series) “স্ক্যাম ১৯৯২: দ্য হর্ষদ মেহতা স্টোরি”। যেখানে হর্ষদ মেহতার (Harshad Mehta) প্রায় ৫,০০০ কোটি টাকার কেলেঙ্কারির বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছিল। যেটি প্রত্যক্ষ করার পর এই কেলেঙ্কারি সম্পর্কে অবাক হয়েছিলেন সকলেই। তবে, দেশের ইতিহাসের সবথেকে বড় স্ক্যামারের তকমা যাঁর কাছে রয়েছে তাঁর কীর্তি জানলে রীতিমতো উড়ে যাবে হুঁশ। ১০ বছরে ১৮ টি রাজ্য ও ৭২ টি শহর জুড়ে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি করে দেশের অর্থনীতিকেই টলিয়ে দিয়েছিলেন ওই ব্যক্তি।

সম্প্রতি তাঁকে ঘিরেও “স্ক্যাম ২০০৩-দ্য তেলগি স্টোরি” নামের একটি ওয়েব সিরিজ মুক্তি পেয়েছে ওটিটিতে। এতক্ষণে তাঁর পরিচয় সম্পর্কে অনেকেই হয়তো সঠিক আন্দাজ করে ফেলেছেন। মূলত, আমরা আব্দুল করিম তেলগি (Abdul Karim Telgi)-র বিষয়েই বলছি। তাঁর হাজার হাজার কোটি টাকার এই কেলেঙ্কারি রীতিমতো ঘুম কেড়ে নিয়েছিল প্রতিটি মহলের। তিনি ভুয়ো স্ট্যাম্প পেপারের মাধ্যমে এই বিপুল অর্থের কেলেঙ্কারি ঘটান। যেটি পরিচিত রয়েছে ভুয়ো স্ট্যাম্প পেপার স্ক্যাম ২০০৩ বা তেলগি কেলেঙ্কারি নামে।

বলা হয় যে, আবদুল করিম তেলগি স্ট্যাম্প পেপার কেলেঙ্কারির মাধ্যমে এত টাকা উপার্জন করেছিলেন যার সঠিক অনুমান আজ পর্যন্ত করা যায়নি। কর্ণাটকের একজন দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তেলগি। শৈশবেই বাবাকে হারিয়েছিলেন তিনি। তারপরেই পরিবারের সমস্ত দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর কাঁধে। একটা সময়ে তিনি রেল স্টেশনে ফল ও শাকসবজি বিক্রিও শুরু করেন।

আরও পড়ুন: মাত্র ৪ ঘণ্টা কাজ করলেই হবে, শীতকালে বাড়িতে বসেই আয় করুন লাখ লাখ টাকা

তারপরে তিনি চলে যান বিদেশে। ১৯৯০ সালের দিকে তিনি ভারতে ফিরে এসে জাল পাসপোর্ট ও ভিসা তৈরি করে উপসাগরীয় দেশগুলিতে লোক পাঠাতে শুরু করেছিলেন। যার মাধ্যমে তিনি আয় করেন বিপুল অর্থ। যদিও, এইভাবে জালিয়াতির ঘটনায় পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে এবং তাঁর জেলও হয়। যদিও, জেলে গিয়েই তিনি পেয়ে যান আরেক পরিকল্পনা। মূলত, জেলে রতন সোনি নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হয় তেলগির। রতন তেলগিকে বলেছিলেন যে, স্ট্যাম্প পেপারকে কাজে লাগিয়েই বড় জালিয়াতি করা সম্ভব।

আরও পড়ুন: ট্রেন থেকে লেপ, কম্বল চুরি করলে কী হয় জানেন? একবার জানলে ভুলেও ছোঁবেন না রেলের জিনিস

এদিকে, নতুন আইডিয়া পাওয়ার পরেই জেল থেকে বেরিয়ে তেলগি স্ট্যাম্প পেপার জালিয়াতির প্রস্তুতি শুরু করেন এবং নাসিকে একটি প্রিন্টিং প্রেসের সন্ধান পান যেখানে স্ট্যাম্প ছাপানো হয়। সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই স্ট্যাম্প পেপার ছাপানোর জন্য তেলগি প্রায় ৩০০ জনকে নিয়োগ করেন। আর তাঁর কাজ ছিল এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গিয়ে এই স্ট্যাম্পগুলিকে বিক্রি করা।

This person has done a scam worth 30 thousand crores

এইভাবেই তিনি ধীরে জাল স্ট্যাম্প পেপারের জাল ছড়াতে শুরু করেন। একটা সময়ে ওই স্ট্যাম্পগুলি কর্পোরেট সেক্টর থেকে শুরু করে তহসিল এমনকি স্টক মার্কেটেও বিক্রি হতে শুরু করে। জানা গিয়েছে, ১৯৯২ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার স্ট্যাম্প কেলেঙ্কারি হয়। যদিও, এই বিশাল কেলেঙ্কারির ফলে ২০০৭ সালে আদালত সাজা দেয় তেলগিকে। যেখানে তাঁর ৩০ বছরের কারাদণ্ড এবং ২০২ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। উল্লেখ্য যে, আদালতের ইতিহাসে এই প্রথম কাউকে এত বড় অঙ্কের জরিমানা করা হয়েছিল। তবে, ২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর কারাগারেই মৃত্যু হয়ে তাঁর। তবে, তাঁর মৃত্যুকে ঘিরেও উঠেছিল একাধিক প্রশ্ন।