ছেলের শ্রাদ্ধের দিনেও দেখলেন রোগী! কর্তব্যে অবিচল থেকে নজির গড়লেন নবতিপর “বিশুবাবু”

নেশন হান্ট ডেস্ক: আমাদের চারপাশে এমন কিছুজন থাকেন যাঁরা তাঁদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তৈরি করেন অভাবনীয় নজির। শুধু তাই নয়, তাঁরা সমস্ত ব্যক্তিগত ঝড়-ঝঞ্ঝাকে উপেক্ষা করে কর্তব্যে (Duty) অবিচল থেকে করে যান নিজেদের কাজ। বর্তমান প্রতিবেদনে আমরা ঠিক সেইরকমই এক নবতিপর চিকিৎসকের (Doctor) প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব। যিনি, তাঁর একমাত্র ছেলের পারলৌকিক কাজের দিনেও আর পাঁচটা দিনের মতোই রোগী দেখলেন।

সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহধন্য লাভপুরের মহুগ্রামের বাসিন্দা ৯৫ বছরের চিকিৎসক সুকুমার চন্দ্র এলাকায় তাঁর জনদরদী কর্মকাণ্ডের জেরে সুপরিচিত। তবে, এবার তিনি নিজের কর্তব্যবোধে অটল থেকে রীতিমতো নজির গড়লেন। জানা গিয়েছে যে, ছেলের মৃত্যুর দিনেও তিনি রোগী দেখেছেন। সাধারণ মানুষের কাছে অবশ্য সুকুমার বাবু পরিচিত “বিশুবাবু” হিসেবে।

এই প্রসঙ্গে স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, সুকুমারের একমাত্র ছেলে সৌমিত্র চন্দ্র ছিলেন পরোপকারী শল্য চিকিৎসক। তিনি কলকাতার একটি হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। পাশাপাশি, যুক্ত ছিলেন রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গেও। বাবার মতো তিনিও চিকিৎসার ক্ষেত্রে জনদরদী পদক্ষেপ গ্রহণ করতেন। এমনকি, বহুবার লাভপুরে বিনা খরচে অস্ত্রোপচারও করেছেন সৌমিত্র। তবে, গত ২ নভেম্বর ফুসফুসের সংক্রমণে কলকাতার একটি হাসপাতালে ৬১ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়। সেদিনও বিশুবাবু রোগী দেখেছেন।

এদিকে, গত রবিবার কলকাতার বাড়িতে ছিল সৌমিত্র বাবুর পারলৌকিক কাজ। ছেলের কথা বলতে গিয়ে অশ্রু ভারাক্রান্ত হয়ে নবতিপর চিকিৎসক জানান, ‘‘যে চলে গিয়েছে তাকে তো আর ফিরে পাব না। তাই, যাঁরা আছেন তাঁরা যাতে সুস্থ থাকেন, সেই জন্য চেম্বার করে যাচ্ছি। হয়তো ছেলের আত্মা এতেই শান্তি পাবে।” পাশাপাশি, তাঁর স্ত্রী রাধা চন্দ্র বলেন, ‘‘ওঁকে কোনো দিন রোগীদের ফেরাতে দেখিনি। এখনও সঙ্কটাপন্ন রোগী দেখার ডাক এলে ছুটে যান তিনি।’’

আরও পড়ুন: আর মাত্র কয়েকদিনের অপেক্ষা, টাকা কামানোর জন্য দুর্দান্ত সুযোগ দিচ্ছে Tata, এভাবে হয়ে যান লাখপতি

উল্লেখ্য যে, সুকুমারের গ্রামে থেকে রোগীদের পরিষেবা দেওয়ার বিষয়ে অবদান রয়েছে বিশিষ্ট সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের। প্রথমে সুকুমার ডাক্তারি পাশ করে প্রথমে মধ্যপ্রদেশের কাটনির অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির সিন্ধি হাসপাতালে চাকরিতে যোগদান করেন। কিন্তু সেখানকার একাধিক নিয়ম মন থেকে তিনি মেনে নিতে পারেননি। যার ফলে তিনি ইস্তফা দেন। তারপরে সুকুমার বাবু চাকরি পান গোপালপুরে সাউথ ইস্টার্ন রেলওয়েতে। সেই চাকরি তাঁকে নিতে বারণ করেন তারাশঙ্কর। বিশিষ্ট এই সাহিত্যিক ছিলেন সুকুমারের বাবার অভিন্ন হৃদয় বন্ধু।

আরও পড়ুন: হার মানবে পাওয়ার ব্যাঙ্কও! একবার চার্জ দিলেই চলবে ৭৫ দিন, এই ফোনের ফিচার্স এবং দাম চমকে দেবে

তারাশঙ্করই সুকুমারকে জানিয়েছিলেন, ‘‘তোমার চাকরি করা চলবে না। বরং, গ্রামে গিয়ে মানুষের সেবা করো।’’ সেই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে সেবার ব্রতে ব্রতী হয়ে তিনি গ্রামে এক টাকা ফি নিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন। এখনও যৎসামান্য ফি-তেই রোগী দেখে চলেছেন তিনি। পাশাপাশি, যাঁরা ফি দিতে পারেন না তাঁরাও পান চিকিৎসা। গরিবদের দেন ওষুধপত্রও।

The doctor saw the patient even on the day of his son's last rites

সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, তারাশঙ্করের বিভিন্ন গল্প এবং উপন্যাসের একাধিক চরিত্র সুকুমারের ওপর ভর করে লেখা হয়েছে। এদিকে, জনসেবামূলক কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন জনহিতকর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন সুকুমার। তাঁকে জীবনকৃতি পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।