নেশন হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে গতানুগতিকভাবে চাকরির পথে না হেঁটে অনেকেই নিত্যনতুন ব্যবসার (Business) প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে শুরু করা ওই ব্যবসাগুলি সঠিকভাবে করার মাধ্যমে খুব সহজেই লাভবান হচ্ছেন উদ্যোক্তারা। সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, কিছুজন আবার পরিবেশ দূষণের বিষয়টি মাথায় রেখে পরিবেশবান্ধব জিনিসপত্রের মাধ্যমেই ব্যবসা শুরু করে নজির গড়ছেন এবং তুমুল লাভের সম্মুখীনও হচ্ছেন। বর্তমান প্রতিবেদনে আমরা ঠিক সেইরকমই এক ব্যক্তির প্রসঙ্গ আপনাদের সামনে উপস্থাপিত করব। যিনি, গোবর থেকে ইট, সিমেন্ট, রং বানিয়ে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।
হ্যাঁ, প্রথমে বিষয়টি জেনে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটা কিন্তু একদমই সত্যি। হরিয়াণার রোহতকের বাসিন্দা ডক্টর শিবদর্শন মালিক গত ৫ বছর ধরে গোবর থেকে সিমেন্ট, ইট ও রং তৈরি করছেন এবং সেগুলি ব্যবহার করতে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করছেন। ইতিমধ্যেই তাঁর এই উদ্যোগ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, শিবদর্শন শতাধিক ব্যক্তিকে এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এছাড়াও, তিনি অনলাইন এবং অফলাইনে পণ্য বিক্রি করেন। শিবদর্শন এই কাজ করেই বার্ষিক ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ টাকা আয় করছেন।
কৃষক পরিবারের ছেলে শিবদর্শন তাঁর গ্রামের স্কুল থেকে স্কুলের শিক্ষা শেষ কর রোহতক থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং তারপর পিএইচডি ডিগ্রি পান। তিনি কয়েক বছর একটি কলেজেও পড়িয়েছেন। যদিও, সেই চাকরি তিনি ছেড়ে দেন। চাকরি ছাড়ার পর শিবদর্শন সিদ্ধান্ত নেন এমন কিছু করবেন যাতে গ্রামের মানুষ আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন এবং চাকরির জন্য তাঁদের কোথাও বাইরে যেতে না হয়।
শিবদর্শন IIT দিল্লির ওয়েস্ট টু হেলথ নামের একটি প্রকল্পের সাথে যুক্ত হন এবং কয়েক বছর তাদের সাথে কাজ করার পরে, তিনি ২০০৪ সালে বিশ্বব্যাঙ্কের সাথে এবং তারপরে ২০০৫ সালে রিনিউয়েবল শক্তির ওপর ইউএনডিপির একটি প্রকল্পের সাথে কাজ শুরু করেন। সেখানে কর্মরত অবস্থায় তিনি আমেরিকা ও ইংল্যান্ডে যাওয়ার সুযোগ পান। সেখানেই তিনি বুঝতে পারেন যে, বিদেশের শিক্ষিত ও ধনী ব্যক্তিরাও সিমেন্ট ও কংক্রিটের তৈরি বাড়িতে বসবাস না করে পরিবেশবান্ধব বাড়িতে থাকতে পছন্দ করেন। সেগুলির বিশেষত্ব হল, শীতকালে ওই বাড়িগুলি ভেতর থেকে উষ্ণ থাকে। শিবদর্শন এই পদ্ধতিটি পছন্দ করেছিলেন এবং ভারতে ফিরে এসে তিনি বর্জ্য পদার্থ নিয়ে নতুন কিছু পরীক্ষা করার কথা ভেবেছিলেন।
আরও পড়ুন: অবশেষে মিলবে স্বস্তি? মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বড় তথ্য সামনে আনলেন RBI গভর্নর
প্রথমে গোবর থেকে সিমেন্ট তৈরি: শিবদর্শন গোবর থেকে সিমেন্ট ও রং তৈরি করার পথে হাঁটেন। ২০১৫-১৬ সালে তিনি পেশাদার স্তরে তাঁর কাজ শুরু করেন এবং গোবর থেকে সিমেন্ট তৈরি করে প্রথমে নিজে ব্যবহার করেন এবং গ্রামের লোকজনকেও ব্যবহার করতে দেন। সবাই এই বিষয়টি খুব পছন্দ করেন। এদিকে, গোবর থেকে সিমেন্ট তৈরি করার পর তিনি এই বিষয়ে আরও গবেষণা চালিয়ে যান এবং ২০১৯ সালে গোবর থেকে রং ও ইট তৈরি শুরু করেন।
আরও পড়ুন: অপ্রতিরোধ্য ভারত! এই পরিসংখ্যানে চিনকে টেক্কা দিল দেশ, জানলে গর্বে ভরে উঠবে বুক
বর্তমানে তিনি প্রতিবছর ৫ হাজার টন গোবর থেকে তৈরি সিমেন্ট বাজারজাত করার পাশাপাশি, বিপুল পরিমাণে রং এবং ইটও বিক্রি করছেন। নিজের রাজ্যের পাশাপাশি শিবদর্শন বিহার, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, হিমাচল সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে পণ্য পাঠাচ্ছেন। তিনি জানান, এই কাজ থেকে বছরে ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ টাকার টার্নওভার মিলছে।
পরিবেশ বাঁচানোর চেষ্টা: মূলত, পরিবেশের কথা মাথায় রেখে তিনি গোবরে জিপসাম, মাটি ও লেবুর গুঁড়ো ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব সিমেন্ট তৈরি করেন। যেটির বাম দেওয়া হয়েছে বৈদিক প্লাস্টার। শিবদর্শন বিকানেরে তাঁর কারখানা স্থাপন করেছেন এবং সমস্ত পণ্য ল্যাব কর্তৃক সার্টিফায়েড। এর পাশাপাশি, তিনি অন্যান্যদের জন্য কর্মসংস্থানের পথও খুলে দিয়েছেন। তিনি বিকানেরে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও খুলেছেন। এই কেন্দ্রে, শিক্ষার্থীকে ২১ হাজার টাকা ফি জমা দিতে হয়। সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বর্তমানে ১০০ জনেরও বেশি এইভাবে গোবর থেকে ইট তৈরি করছেন এবং তা থেকে লাভও করছেন।