বাইক অ্যাক্সিডেন্ট কেড়েছিল বন্ধুকে! তারপর চাকরি ছেড়ে, বাড়ি বেচে হেলমেট দান করাই কাজ এই তরুণের

নেশনহান্ট ডেস্ক : চোখে ছিল সমাজ সেবার স্বপ্ন। সেই স্বপ্নকে সঙ্গী করে বন্ধুর সাথে পাড়ি জমিয়েছিলেন দিল্লি। কিন্তু দুই বন্ধু একসাথে পূরণ করতে পারেননি তাদের স্বপ্ন। প্রিয় বন্ধুর মৃত্যু ঘটে বাইক দুর্ঘটনায়। বন্ধুর মৃত্যুর পর তরুণ বিক্রি করে দেন জমি, বাড়ি। যাতে কেউ আর বাইক দুর্ঘটনায় প্রাণ না হারান সেই উদ্দেশ্যে বিনামূল্যে বিলি করতে শুরু করেন হেলমেট।

দিল্লির তরুণ রাঘবেন্দ্র কুমার গোটা ভারতে এখন পরিচিত ‘হেলমেট ম্যান’ নামে। রাঘবেন্দ্র জন্মগ্রহণ করেন বিহারের কাইমুর জেলায়। চাষবাসের সাথে যুক্ত ছিলেন তার বাবা। বিহারের মধুবনি জেলার বাসিন্দা কৃষ্ণ কুমার ছিলেন রাঘবেন্দ্রর বন্ধু। শুধুমাত্র দশটা-পাঁচটার চাকরিতে নিজেদের সীমাবদ্ধ করে রাখতে চাননি রাঘবেন্দ্র এবং কৃষ্ণ।

আরোও পড়ুন : মুড সুইং শীতের! দক্ষিণবঙ্গে এবার তাপমাত্রা বাড়ার ইঙ্গিত , কবে থেকে বদল আসছে আবহাওয়ায় ?

তাদের স্বপ্ন ছিল দিল্লিতে গিয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি সমাজের জন্য কাজ করা। রাঘবেন্দ্রর পারিবারের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। বারাণসীতে স্কুলের পড়া শেষ করার পর ৩-৪ বছর কিছু টাকা জমান বিভিন্ন চাকরি করে। আইন নিয়ে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে রাঘবেন্দ্র ২০০৯ সালে যান দিল্লি। সেখানে তার সাথে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য যান কৃষ্ণ। 

পড়াশোনা শেষ করে একটি চাকরিও পান রাঘবেন্দ্র।তবে ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে একটি বাইক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান রাঘবেন্দ্র প্রাণের বন্ধু কৃষ্ণ। রাঘবেন্দ্র একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, হেলমেট না পরে বাইক চালানোর জন্য দুর্ঘটনায় গুরুতরভাবে জখম হয়ে মৃত্যু হয় কৃষ্ণর। ১০ থেকে ১২ দিন হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ার পর কৃষ্ণ মারা যান। 

সাক্ষাৎকারে রাঘবেন্দ্র আরো জানিয়েছেন, হেলমেট পরা থাকলে কৃষ্ণর এই মর্মান্তিক পরিণতি হত না। কৃষ্ণর মৃত্যুর সাথে সাথে শেষ হয়ে যায় তাদের পরিবারের স্বপ্ন। কৃষ্ণর মৃত্যুর পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন বিনামূল্যে হেলমেট বিলি করার।‌ রাঘবেন্দ্র হেলমেট বিলি করা শুরু করেন ২০১৪ সালের অক্টোবর মাস থেকে। চাকরির ফাঁকে সময় পেলেই তিনি নেমে পড়েন পথে।

আরোও পড়ুন : ‘দূরে গাছের তলায়…’মেয়েকে কলেজে ছাড়ার মুহূর্তে মনে হল গোপন সম্পর্কের অনুভূতি! এ কী বলে বসলেন মহারাজ?

বিহার থেকে গ্রেটার নয়ডা যাতায়াতের রাস্তায় অন্তত একজনকে তিনি হেলমেট বিলি করতেন। এছাড়াও কাউকে হেলমেট ছাড়া বাইক চালাতে দেখলে তিনি নিজেকে ধরে রাখতে পারতেন না। এখনো পর্যন্ত রাঘবেন্দ্র প্রায় পঞ্চাশ হাজার হেলমেট বিলি করেছেন। যদিও তিনি চান না কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাথে যুক্ত হতে। নিজে খরচ করেই হেলমেট কেনেন রাঘবেন্দ্র।

রাঘবেন্দ্রর কথায়, ৪০ লাখ টাকায় তিনি তার গ্রেটার নয়ডার বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছেন। বিটকয়েন, মিচুয়াল ফান্ড বিক্রি, এমনকি স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখে অর্থ জোগাড় করেছেন তিনি। এমনকি তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন তিন বিঘা পৈতৃক জমিও। রাঘবেন্দ্রর দাবি এখনো পর্যন্ত তিনি খরচ করেছেন প্রায় আড়াই কোটি টাকা। এমনকি অনগ্রসর শ্রেণীর পড়ুয়াদের সাহায্যের জন্য তৈরি করেছেন  ‘বুক ব্যাঙ্ক’ও।