ডাকাতদের সাথে মা কালীর কী সম্পর্ক? এই বাংলারই কয়েকটি মন্দিরকে ঘিরে আছে হাড়হিম করা ইতিহাস

নেশনহান্ট ডেস্ক : ছোটবেলায় আমরা সকলেই বিভিন্ন ডাকাতদের কর্মকাণ্ডের গল্প শুনেছি। একটা সময় বাংলার সাধারণ মানুষ এই ডাকাতদের ভয়ে শিটিয়ে থাকতেন। ডাকাত শব্দ টা শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে কালো মোটা গোঁফ, লম্বা, পেশীবহুল চেহারার কোনও পুরুষ। তবে বাংলার ডাকাতদের ইতিহাসের সাথে আরও একটি জিনিস যুক্ত হয়ে রয়েছে, সেটি হল কালীপুজো।

বিভিন্ন ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় ডাকাতেরা মা কালীকে পুজো দিয়ে ডাকাতি করতে বের হত। ধীরে ধীরে এই কালীগুলি ‘ডাকাত কালী’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। আর কিছুদিন পর কালীপুজো। এই আবহে আজ আমরা এমন কিছু ডাকাত কালীর গল্প শুনে নেব। চলুন এক নজরে বাংলার কিছু ডাকাত কালী বাড়ির সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

আরোও পড়ুন : মাধ্যমিক পাশ? তাহলে আর দেরি কিসের! দুর্দান্ত চাকরির সুযোগ মিলবে এবার মেট্রো রেলেই

রঘু ডাকাতের কালীপুজো : বাংলার কালীপুজোর ইতিহাস ঘাটলে বিভিন্ন জায়গায় রঘু ডাকাত ও তার ডাকাত কালীর উল্লেখ পাওয়া যায়। বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া সহ একাধিক জেলায় রয়েছে রঘু ডাকাতের প্রতিষ্ঠিত কালী মন্দির। তবে এই রঘু ডাকাত ছিলেন কলকাতার বাসিন্দা। যে সময়ের কথা আমরা বলছি সেই সময় উত্তর কলকাতার কাশিপুর রোড ছিল জঙ্গলে ঘেরা। এখানেই রঘু ডাকাতের আস্তানা ছিল। চিত্ত সর্বমঙ্গলা কালী প্রতিষ্ঠিত হয় রঘু ডাকাতের হাত ধরে। জানা যায় পরম বৈষ্ণব ছিলেন এই রঘু ডাকাত। তাই তিনি মা কালীর পুজো করতেন শাক্ত মতে। 

সিঙ্গুরের ডাকাত কালী: হুগলি জেলার সিঙ্গুরের পুরুষোত্তমপুরের ডাকাত কালীমন্দিরের পরিচিতি সারা বাংলা জুড়ে। অনেকেই বলেন এই ডাকাত কালীমন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন রঘু ডাকাত। আবার অনেকের মতে গগন ডাকাত বা বিশু সরদার এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা।

আরোও পড়ুন : আর ফার্স্ট হতে পারল না দীপা-সূর্য! বড়সড় বদল TRP তালিকায়, শেষমেশ প্রথম কোন সিরিয়াল?

ত্রিবেনীর ডাকাত কালী: ডাকাতদের নাম জড়িত রয়েছে ত্রিবেনীর ডাকাত কালী বাড়ির সাথে। অনেকে বলে থাকেন রঘু, বিশে ও অন্যান্য ডাকাতরা ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে এখানেই পুজো দিতেন। জনশ্রুতি রয়েছে একবার ডাকাতেরা সাধক রামপ্রসাদকে বলি দেওয়ার জন্য এখানে নিয়ে আসে। কিন্তু রামপ্রসাদের গান শুনে ডাকাতেরা এতটাই বিহবল হয়ে যায় যে তারা এই মন্দির থেকে নরবলি প্রথা উঠিয়ে দেয়।

কেলেগড় ডাকাত কালী: এক জমিদারের নামানুসারে হুগলি জেলার এই জায়গাটির নামকরণ হয়। সেই জমিদারের নাম ছিল কালাচাঁদ। সেখান থেকেই এই জায়গার নাম হয় কেলেগড় বা কালীগড়। কালাচাঁদ কালী সাধক ছিলেন। অনেকে বলেন সকাল বেলায় তিনি খুবই ধার্মিক ব্যক্তি হিসাবে চলাফেরা করতেন। কিন্তু সূর্য ডোবার পর এই ব্যক্তি হয়ে উঠতেন ভয়ংকর ডাকাত। লুটপাটের পাশাপাশি অনেককে সে বন্দি করে নিয়ে আসত এই মন্দিরে। তাদের বলি দেওয়া হত কালী মন্দিরে।

1212153 maa kali

ডাকাত সরদার প্রহ্লাদের কালীবাড়ি: আউশগ্রামের পান্ডুক গ্রামে প্রায় ৩৫০ বছর আগে কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন ডাকাত সরদার প্রহ্লাদ। শোনা যায় এই কালীমন্দিরের দেখভাল করতেন ডাকাতের বংশধরেরা। তাই আজও কালীপুজোয় ডাকাত পরিবারের সদস্যরা কোনও জিনিস চুরি করে এনে পুজো করেন। এই কালীকে অনেকে বামা কালী হিসেবেও ভক্তি করেন।