নেশনহান্ট ডেস্ক : কিছুদিন আগেই শেষ হয়েছে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। এখন গোটা বাংলা মেতেছে দেবী কালীর আরাধনায়। আবার কিছুদিন পর রয়েছে জগদ্ধাত্রী পুজো। হিন্দু সমাজে এই পুজোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকলেও ধুমধামের সাথে কিন্তু গোটা বাংলায় এই পুজো পালন করা হয় না। প্রাচীনকালে জগদ্ধাত্রী পুজো কিন্তু বাংলায় হত না।
সেই হিসাবে বলতে গেলে খানিকটা আধুনিককালে সূচনা হয়েছে বাংলার জগদ্ধাত্রী পুজোর। নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় আঠারো শতকে জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনা করেন তাঁর রাজধানী কৃষ্ণনগরে। ধরা হয় এটিই ছিল বাংলার প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজো। এরপর জগদ্ধাত্রী পুজোর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। তবে বাঙালি সমাজে জগধাত্রীদেবী কিন্তু পরিচিত ছিলেন।
আরোও পড়ুন : চোখের পলকে পৌঁছে যান দার্জিলিং! হাওড়া থেকে ছাড়ছে নয়া বন্দে ভারত, জেনে নিন সময়সূচি
খৃষ্টীয় ১৫ শতকে ‘কালবিবেক’ গ্রন্থে কার্তিক মাসে জগদ্ধাত্রী পুজোর উল্লেখ করেন শূলপাণি। খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে নির্মিত জগদ্ধাত্রীর একটি প্রস্তরমূর্তিও পাওয়া গিয়েছিল বরিশাল থেকে। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র আধুনিক জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনাকর্তা হলেও, তারও আগে বাংলায় জগদ্ধাত্রী পুজোর উল্লেখ পাওয়া যায়।
আরোও পড়ুন: ২২ বছর ধরে ‘নো আতশবাজি’! নিঃশব্দে দীপাবলি পালন করে ভারতের এই ৭ গ্রাম, কারণ অবাক করবে
জগদ্ধাত্রী মূর্তির ভাস্কর্য দেখতে পাওয়া যায় নদিয়ার শান্তিপুরের জলেশ্বর শিবমন্দির ও কোতোয়ালি থানার রাঘবেশ্বর শিবমন্দিরে। তবে বাংলায় জগদ্ধাত্রী পুজোর রমরমা রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের হাত ধরেই। এছাড়াও কিছু ব্রাহ্মণের বাড়িতে দুর্গা পুজোর পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হত জগদ্ধাত্রী পুজো। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র যে সময় জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনা করেন সেই সময়ে নবাব আলিবর্দির রমরমা।
তিনি কৃষ্ণচন্দ্রের কাছে একবার ১২ লক্ষ টাকা নজরানা চান। কিন্তু রাজা সেই টাকা দিতে অপরাগ হওয়ায় তাকে বন্দী করা হয় মুর্শিদাবাদে। এরপর রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ছাড়া পেলে নদীপথে কৃষ্ণনগর ফেরার সময় দুর্গা বিসর্জনের ঢাকের আওয়াজ শুনতে পান। সেই আওয়াজ শুনে তিনি বুঝতে পারেন যে শারদ উৎসবের সময় উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এরপর সেই রাতে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের স্বপ্নে আবির্ভূত হন দেবী।
জগদ্ধাত্রী রূপে সেই দেবী কৃষ্ণচন্দ্রকে বলেন রাজা যেন তাঁর পুজোর আয়োজন করেন পরবর্তী শুক্লানবমী তিথিতে। কারোর মতে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি জগদ্ধাত্রী পূজার সূচনা কাল ১৭৬৬ সাল। আবার কারোর মতে এই রাজবাড়ীর জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রবর্তক কৃষ্ণচন্দ্রের প্রপৌত্র গিরিশচন্দ্র। যাইহোক, কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ীতে জগদ্ধাত্রী পুজো হওয়ার পরেই ধীরে ধীরে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু হয় অন্যান্য জায়গাতেও।